এডভান্স প্লেসমেন্টে দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের অনন্য অভিজ্ঞতা পেলাম ফেইথ বাংলাদেশে।

Spread the love

আমি ইজমা জাফরীন। আমি সাভার সি আর পি এর অধীনে বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইনস্টিটিউট থেকে অকুপেশনাল থেরাপি নিয়ে বি.এস.সি করছি। আমি বর্তমানে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়ন করছি।

আমাদের কোর্স কারিকুলাম এর অংশ হিসেবে চার বছরই আমাদের প্লেসমেন্ট করতে হয়। প্লেসমেন্টে আমরা  বইয়ে পড়া বিভিন্ন থিওরী গুলোকে ক্লিনিক্যাল থেরাপিস্ট এর তত্ত্বাবধানে থেকে হাতে কলমে শেখার সুযোগ পাই। প্রথম বর্ষে ৭ দিন আমরা সি আর পি এর ক্লিনিক্যাল সেক্টরে অবজারভেশন প্লেসমেন্ট করি। দ্বিতীয় বর্ষে আমরা সি আর পি এর ক্লিনিক্যাল চারটি ইউনিটে চার মাস প্লেসমেন্ট করি। চারটি ইউনিট হলো: পেডিয়াট্রিক, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বিভাগ, নিউরোলজি বিভাগ এবং স্পেশাল বাচ্চাদের স্কুল। তৃতীয় বর্ষে আমরা সি আর পি এর তত্ত্বাবধানে চার মাস চারটি ভিন্ন জায়গায় প্লেসমেন্ট করি। তার মধ্যে রয়েছে :সাধারণ কমিউনিটি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং গাজীপুর শিশু পল্লী প্লাস। এই সবগুলো প্লেসমেন্টে আমরা বিভিন্ন ধরণের রোগীদের সাথে কাজ করার সুযোগ পাই। আমরা হাতে কলমে অনেক জ্ঞান অর্জন করি।

চতুর্থ বর্ষে আমাদের এক মাস এডভান্স প্লেসমেন্ট করতে হয়, যেখানে আমাদেরকে সুযোগ দেওয়া হয় নিজেদের পছন্দ মতো বাহিরের কোন একটি অর্গানাইজেশনে কাজ করার জন্য, যেখানে আমরা এডভান্স জ্ঞান অর্জন করতে পারবো। তবে অবশ্যই উক্ত অর্গানাইজেশন এবং আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর অনুমতি সাপেক্ষে কাজ করতে হবে। দ্বিতীয় বর্ষে পেডিয়াট্রিক সেটিংসে কাজ করার সময় আউটডোরে মাঝে মাঝে অটিজম, ডাউন সিনড্রোম সহ বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা জনিত বাচ্চা দেখার সুযোগ হতো। কিন্তু তুলনামূলক ভাবে এসব বাচ্চাদের সাথে কাজ করার সুযোগ কম পেয়েছি। তাই  তখন থেকেই ইচ্ছা ছিলো এসব বাচ্চাদের সাথে আরও কাছে থেকে কাজ করার। সেই চিন্তা থেকেই এডভান্স প্লেসমেন্টের জন্য, আমি আমার ইচ্ছা এবং প্রয়োজন মাথায় রেখে বিভিন্ন অর্গানাইজেশন সার্চ করতে থাকি। 

তখন আমি ফেইথ বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারি এবং অনেক তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারি ফেইথ বাংলাদেশে অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, আচরণগত সমস্যা ইত্যাদি বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করা হয়। তখন আমি এখানে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং ফেইথ বাংলাদেশের লিড অকূপেশনাল থেরাপিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করি এবং ফেইথ বাংলাদেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আরও তথ্য জানতে পারি। ফেইথ বাংলাদেশ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হলে আমি আমার ডিপার্টমেন্টে ফেইথ বাংলাদেশ এর প্রয়োজনীয় তথ্য সাবমিট করি এবং প্লেসমেন্ট করার অনুমতি চাই। ডিপার্টমেন্ট থেকেও আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়। ডিপার্টমেন্ট থেকে  আমাকে একটি ফরওয়ার্ড লেটার দেওয়া হয়, যা নিয়ে আমি ফেইথ বাংলাদেশে সাবমিট করি। তখন থেকেই ফেইথের ম্যানেজমেন্ট এবং অভ্যন্তরীন সাজানো গোছানো পরিবেশ আমাকে আকৃষ্ট করে। ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ থেকে আমি আমার প্লেসমেন্ট শুরু করি এবং প্রথম দিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ফিল আপ করি।

আমরা এক মাসে কি কি শিখতে চাই তাও ফিল আপ করি। ফেইথের ৩ জন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট আমাদের গ্রুপের ৩ জনকে আলাদা আলাদা ভাবে সুপারভাইজ করেন। এবং প্রতি ৯দিন পর পর আমাদের সুপারভাইজর পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যেনো আমরা সবার কাছ থেকেই শিখার সুযোগ পাই। প্রথম কিছুদিন আমি অবজারভেশন করি। প্রতিদিন প্রায় ৮ টি পেশেন্ট অবজার্ভ করার সুযোগ পেতাম।

সেক্ষেত্রে আমি একটা বাচ্চার ফিজিক্যাল ফিচার থেকে শুরু করে তার আচরণ, ব্যবহার সবকিছুই অবজার্ভ করতাম এবং যে বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হতো আমার সুপারভাইজার কে প্রশ্ন করতাম এবং বিস্তারিত উত্তর পেতাম। প্রশ্ন করা ছাড়াও আমার সুপারভাইজর সময়ে সময়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য আমাকে  জানিয়েছেন যা বাচ্চার কন্ডিশন সম্পর্কে আমাকে আরও জানতে  সাহায্য করে। অটিজম, ADHD, ডাউন সিনড্রোম বাচ্চাদের বিভিন্ন ট্রিটমেন্ট টেকনিক এবং ম্যানেজিং টেকনিক থেরাপি সেশনে  সরাসরি দেখার সুযোগ পেয়েছি। তাছাড়াও বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট, তাদের নাম এবং ইকুইপমেন্ট কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, কেন ব্যবহার করতে হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। তাছাড়া একটা বাচ্চাকে প্রথম দিন কিভাবে এসেসমেন্ট করতে হবে, বাচ্চার মা বাবাকে কি কি প্রশ্ন করে বাচ্চা সম্পর্কে ডিটেইলস জেনে নেওয়া যাবে এই বিষয় গুলো আলাদা ভাবে এসেসমেন্ট ফর্ম এর মাধ্যমে আমাকে শিখিয়ে দেওয়া হয় এবং কিছুদিন পরে সুপারভাইজর এর পাশে থেকে একটি এসেসমেন্ট সেশন অবজার্ভ করার সুযোগ পাই যেখানে আমিও আমার নিজের মতন করে এসেসমেন্ট করার সুযোগ পাই, সাথে সাথে নতুন কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি তা হলো: এপ্লাইড বিহেভিয়ার এনালাইসিস, বাচ্চাদের সেনসরি সমস্যা, বাচ্চাদের আচরণগত সমস্যার কারন এবং ম্যানেজমেন্ট টেকনিক, কিভাবে বুঝতে পারবো কোন বাচ্চার অটিজম এবং কোন বাচ্চার ADHD, অটিজম এবং ADHD বাচ্চাদের খাদ্যাভাস সহ কিভাবে বাচ্চাদের বাবা মায়ের সাথে কো-অপারেট করতে হবে ইত্যাদি।

তৃতীয় সপ্তাহে আমরা বাচ্চাদের সাথে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পাই, যেখানে সুপারভাইজার আমাদের বাচ্চাদের সাথে বিভিন্ন একটিভিটি করারও অনুমতি দিয়েছিলেন। এতে করে আমার দক্ষতা অর্জনের একটা সুযোগ তৈরি হয়। প্রতি সপ্তাহে ফেইথ বাংলাদেশে বাচ্চাদের নিয়ে গ্রুপ পরিচালনা করা হতো যেখানে বিভিন্ন লেভেলের বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করা হতো। প্রথম থেকেই সুযোগ হয়েছিলো গ্রুপে বাচ্চাদের সাথে কাজ করার। তা ছাড়াও, গ্রুপের প্ল্যানিং এর সময় সুপারভাইজাররা আমাদের অংশগ্রহন করার সুযোগ দিয়েছিলেন যেখানে আমরা গ্রুপের একটিভিটি এবং কোন এক্টিভিটি করলে কি হবে এগুলো জানতে পারি। আমরা আমাদের বিভিন্ন মতামত শেয়ার করারও সুযোগ পেয়েছি। গ্রুপে থাকার সেই অভিজ্ঞতা হিসেবে আমরা গ্রুপের বাচ্চাদের লেভেল অনুযায়ী তাদের জন্য বিভিন্ন এক্টিভিটি প্ল্যান করে সাবমিট করি যা পরবর্তীতে বাচ্চাদের জন্য এপ্লাই করা হবে।

তৃতীয় সপ্তাহেই আমরা স্পেসিফিক ৩ তি কন্ডিশন (অটিজম, ADHD, ডাউন সিনড্রোম) নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেই, যেখানে ফেইথ বাংলাদেশের সকল স্টাফ উপস্থিত ছিলেন এবং কিভাবে প্রেজেন্টেশন দিতে হয় সে সম্পর্কেও খুব সুন্দর ভাবে আমাদেরকে গাইড করেন এবং আরও অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের সাথে শেয়ার করেন।

শেষের সপ্তাহে আমরা একটি প্রজেক্ট ওয়ার্ক সম্পন্ন করি যেখানে আমরা সেনসরি প্রসেসিং ডিজঅর্ডার, সেনসরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, সেনসরি সমস্যার লক্ষণ এবং সেই অনুযায়ী একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট কি কি সেবা দিয়ে থাকে সেগুলো সম্পর্কে ডিটেইলস বর্ননা দেই। এই প্রজেক্ট সম্পন্ন করার পেছনে আমাদের সুপারভাইজরদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, যারা সময়ে সময়ে প্রজেক্ট চেক করেছেন এবং ফিডব্যাক দিয়েছেন।

শেষ সপ্তাহে আমরা আরও একটি কেইস প্রেজেন্টেশনও সম্পন্ন করি যেখানে আমরা একজন পেশেন্ট, তার সমস্যা অনুযায়ী তাকে কি কি থেরাপি দেওয়া হয়েছে এবং এর ফলে তার কি কি ইম্প্রুভমেন্ট হয়েছে তা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করি। এছাড়াও ফেইথ বাংলাদেশের সাথে এক মাসের জার্নি নিয়ে একটি গ্রুপ প্রেজেন্টেশনও করি। প্রফেশন এবং প্রফেসনালিজম নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেইনিং এর অংশীদার হওয়ারও সুযোগ পাই যা আমাকে ভবিষ্যতে অনেক হেল্প করবে।

ফেইথ বাংলাদেশের সাথে এক মাসের অভিজ্ঞতা থেকে আমি এটুকু বলতে পারি, এই অভিজ্ঞতা একদিন দক্ষতায় রূপ নিবে এবং ফেইথ বাংলাদেশ থেকে শিখে আসা সমস্ত কিছু আমার ইন্টার্নশিপ এবং প্রফেশনাল লাইফে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আশা করি। এই এক মাসে আমি যা যা শিখার আগ্রহ নিয়ে ফেইথে এসেছিলাম, তার থেকেও অনেক বেশি কিছু শিখেছি। আর এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আমার সুপারভাইজররা। এক মাসে তারা আমাদের পেছনে অনেক শ্রম এবং সময় দিয়েছেন। তারা তাদের  সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন যেন আমরা এখান থেকে সেরাটা শিখে যেতে পারি। ফেইথের বাকি স্টাফরাও আমাদের সাথে অত্যন্ত অমায়িক ছিলেন এবং আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। সবাই মিলে একটা বন্ধুত্বপূর্ন পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো, যা আমার শেখার আগ্রহ এবং সুযোগ কে দ্বিগুন করেছে। আমি মন থেকে ফেইথ বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই সবকিছুর জন্য এবং আমি অবশ্যই চাই ভবিষ্যতে যেনো ফেইথ বাংলাদেশ পরিবারের একজন সদস্য হতে পারি।

ইজমা জাফরীন

বি এস সি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, চতুর্থ বর্ষ।

বি এইচ পি আই, সি আর পি, সাভার, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Skip to content