আমি মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম। আমি সাভার সিআরপির অধীনে বাংলাদেশ হেলথ প্রফেসন্স ইন্সটিটিউট-এ বি.এস.সি. ইন অকুপেশনাল থেরাপি ডিপার্টমেন্টে ফাইনাল ইয়ার এ পড়াশোনা করছি। আমাদের কোর্স কারিকুলামের অংশ হিসেবে ১ম বর্ষে আমরা ৭ দিনের অবজারভেশন প্লেসমেন্ট করি, দ্বিতীয় বর্ষে ৪ মাস ক্লিনিক্যাল প্লেসমেন্ট করি বিভিন্ন ইউনিটে, এবং তৃতীয় বর্ষে কমিউনিটি বেজড এবং ঢাকা মেডিকেল, জাতীয় মানসিক হাসপাতালে প্লেসমেন্ট করি, যেখানে আমরা থিওরী এবং প্রাক্টিক্যাল অনেক জ্ঞান অর্জন করি। পূর্বের ইয়ারের প্লেসমেন্ট গুলোর ন্যায় আমরা ফাইনাল ইয়ারেও ১ মাাস এডভান্স প্লেসমেন্ট করার সুযোগ পাই যেখানে আমরা নিজেদের মত অর্গানাইজেশন পছন্দ করে, উক্ত অর্গানাইজেশন এবং ডিপার্টমেন্টের অনুমতি নিয়ে কাজ করে এডভান্স জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাই। দ্বিতীয় বর্ষে প্লেসমেন্ট করার সময় পেডিয়াট্রিক ইউনিটে যখন বাচ্চাদের সাথে একমাস কাজ করেছিলাম তখন থেকেই ইচ্ছে ছিলো ভবিষ্যতে পেডিয়াট্রিক সেটিংস এ বাচ্চাদের সাথে কাজ করার। যেহেতু বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিলো সেহেতু আমি এডভান্স প্লেসমেন্ট এর জন্য অর্গানাইজেশন পছন্দ করার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করে এমন অর্গানাইজেশনকে প্রথম প্রায়রিটি হিসেবে রাখি। আমার প্রায়রিটি অনুযায়ী আমি অর্গানাইজেশন খোঁজ করতে থাকি, তখন ফেইথ বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারি এখানে অটিজম, ADHD, ডাউন সিন্ড্রোম বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করা হয়।
এরপর ফেইথ বাংলাদেশে কর্মরত একজন লিড অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করি এবং অর্গানাইজেশন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারি। এরপর আমি আমাদের ডিপার্টমেন্টে এডভান্স প্লেসমেন্ট করার জন্য ফেইথ বাংলাদেশের নাম দেই, ডিপার্টমেন্ট আমাকে অনুমতি দেয়। ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাদের ফরওয়ার্ডিং লেটার দেয় আমরা সেই লেটার নিয়ে ফেইথ বাংলাদেশে সাবমিট করতে যাই। ফেইথ বাংলাদেশের অর্গানাইজিং পরিবেশ, ম্যানেজমেন্ট এবং স্টাফদের ব্যবহার সবকিছুই আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। তখন মনে হয়েছিলো আমরা এখান থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাব।
২০-০৯-২০২১ থেকে আমার প্লেসমেন্ট এর জার্নি শুরু হয়, প্রথম দিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ফিলআপ করি। আমরা যেহেতু একটা গ্রুপে গিয়েছি আমরা ৩ জন, ৩ জন সুপারভাইজার এর সুপারভিশন এ অবজারভেশন করার সুযোগ পাই। প্রথম ৭ দিন অবজারভ করার সময় কিছু ট্রিটমেন্ট টেকনিক, থিওরেটিকাল বিষয়ের সাথে রিলেট করতে পারছিলাম। যেহেতু সিআরপিতে প্লেসমেন্ট করা অবস্থায় আমার অটিজম, ADHD, ডাউন সিন্ড্রোম বাচ্চাদের সাথে সরাসরি কাজ করার সুযোগ হয় নি, তাই এইসব বাচ্চাদের কিভাবে ম্যানেজ করা হয় সেই টেকনিক গুলো থেরাপিস্টদের থেরাপি সেশন থেকে খুব ভাল ভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে এবং শিখতে পেরেছি।
থেরাপি সেশনে যে বিষয়গুলো আমার কাছে নতুন লাগতো সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমি আমার সুপারভাইজারকে প্রশ্ন করতাম, আমাদের সুপারভাইজার আমাদেরকে বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে অবজারভেশনের পাশাপাশি অটিজম বাচ্চাকে কিভাবে এসেসমেন্ট করা হয় সেই প্রসেস এবং এসেসমেন্ট ফরম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাই।
সুপারভাইজার আরো কিছু বিষয় শেয়ার করেন- সেনসরি প্রসেসিং, সেনসরি প্রসেসিং ডিসওর্ডার, অটিজম, ADHD, অটিজম এবং ADHD এর পার্থক্য, সেনসরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, এপ্লাইড বিহেভিয়ার এনালাইসিস এছাড়াও কিভাবে বাচ্চাদের ম্যানেজ করতে হয়, কিভাবে বাচ্চাদের বাবা-মায়ের সাথে ডিল করতে হয় ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।
তৃতীয় সপ্তাহে আমরা সুপারভাইজার এর সুপারভিশনে থেরাপি সেশনে বাচ্চাদের কিছু একটিভেটি করানোর সুযোগ পাই এবং কয়েকটি এসেসমেন্ট সেশনে থাকারও সুযোগ পাই। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন গ্রুপ থেরাপি হতো, গ্রুপ থেরাপি গুলোতেও আমি প্রথমে সরাসরি অবজারভ করার সুযোগ পাই এবং পরে আমরা নিজেরাই গ্রুপ থেরাপি প্লান করে অংশগ্রহণ করারও সুযোগ পাই।
সবশেষে বলতে চাই, ফেইথ বাংলাদেশ থেকে আমি থিওরীটিক্যাল এবং প্রাকটিক্যাল যে জিনিস গুলো শিখতে পেরেছি, তা সামনে ইন্টার্ন এবং ভবিষ্যৎ প্রফেশনাল লাইফে আমার জন্য অনেক কাজে লাগবে।
আমার সুপারভাইজাররা অত্যন্ত অমায়িক ছিলো এবং ফেইথ বাংলাদেশের সকল স্টাফ খুবই আন্তরিক ছিলো, সবার সাপোর্ট এবং সহোযোগিতার জন্যই অনেক কিছু শিখতে পেরেছি, এই জন্য ফেইথ বাংলাদেশেকে অনেক ধন্যবাদ।
আমার অনেক ইচ্ছে আছে, ভবিষ্যৎ-এ কোনদিন যেন ফেইথ বাংলাদেশে কাজ করতে পারি ইনশাআল্লাহ।
মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম
বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী
বিএইচপিআই, সিআরপি, সাভার, ঢাকা