যদি আপনার শিশুর ADHD ডায়াগনসিস হয়ে থাকে তবে প্রথমেই তার আচরণ ম্যানেজম্যান্ট এর দিকে নজর দিতে হবে।
আচরণ ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা
আপনার শিশুর আচরণ যে আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে আলাদা এটা মেনে নিন তাহলে ম্যনেজম্যান্ট এর কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
আচরণ ব্যবস্থাপনায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
১) শিশুর ভালো আচরণকে উৎসাহিত করা যায় এমন কিছু কাজের পরিকল্পনা করুন।
২) সামাজিকতা শেখানোর জন্য অন্যদের – সাথে মেলামেশা করতে পারে তার পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।
৩) শিশুর অতিরিক্ত এনার্জি কোন কোন কাজে ব্যবহার করবেন তার পরিকল্পনা করুন।
৪)স্কুলে পড়াশুনো করছে যেসব শিশু তাদের জন্য বিশেষ ক্লাসরুম পরিকল্পনা করতে হবে।
৫)ADHD শিশুদের অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।
ADHD শিশুদের আচরণ ব্যবস্থাপনায় কিছু টিপসঃ
নিম্নলিখিত আচরণ ব্যবস্থাপনাগুলো আপনার শিশুর সমস্যা মূলোক আচরণগুলো কমিয়ে সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
শিশুর চারপাশের পরিবেশ পরিবর্তন করুন- যাতে সে সহজে ভালো আচরণ করতে পারে। এই বিষয়টি আরো একটু পরিষ্কার করে বলি-
ধরুন আপনার শিশু এমন কিছু আচরণ করছে যা আপনার পছন্দ নয় এক্ষেত্রে একটি ভালো পরিকল্পনা হল শিশুর চারপাশের পরিবেশ পরিবর্তন করা। লক্ষ্য করুন তার চারপাশে কি ঘটছে। পরিবেশ পরিবর্তন মানে এই নয় যে ঘর বা ফার্নিচার পরিবর্তন করা বা সরিয়ে দেওয়া। হয়ত সে যেখানে আছে সেখানে খুব তীব্র আলো বা শব্দ হচ্ছে। শব্দ বন্ধ করা, আলো নিভিয়ে দেওয়া এগুলোকেই চারপাশের পরিবেশ বলা হচ্ছে।
পরিষ্কার সংক্ষিপ্ত মৌখিক নির্দেশ দিন- যাতে আপনি যা চাইছেন তা যেন আপনার শিশু বুঝতে পারে। আমরা কোনটা প্রশ্নবাচক বাক্য আর কোনটা নির্দেশ সূচক বাক্য তা বোঝাতে পারিনা শিশুদের কারন নিজেরাই সঠিক ভাবে বুঝি না কোনটা কি বাক্য।
যেমন ধরা যাক, আপনি শিশুকে বলছেন “তুমি কি আমাকে বিছানা গুছিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারবে?” অথবা “তুমি কি এখন এই গরম জামা টা পড়বে? আজ খুব ঠাণ্ডা পড়েছে।” আপনার চাইল্ড এর কাছে উত্তর দেওয়ার দুটো অপশন থাকবে হ্যা বা না। এগুলো হল প্রশ্নবাচক বাক্য।
আর নির্দেশমূলক বাক্য হল যখন আপনি চাইছেন আপনার চাইল্ড কাজটা করুক। যেমন- “আমায় একটু বিছানা টা গুছিয়ে দিতে সাহায্য করো।” অথবা “এই জামাটা পড়ে নিবে যখন আমরা ঘর থেকে বের হবো। এই ভাবে নির্দেশমূলক বাক্যে আপনার শিশুর কাছে না বলার কোনো অপশন থাকছে না।
তাই এটা লক্ষ্য রাখুন কথা বলার সময় যে আপনি কিছু জিজ্ঞেস করছেন না কাজটা করতে বলছেন।
ভালো আচরণের জন্য প্রশংসা করুন যাতে সে পুনরায় ভালো আচরণ করে। প্রশংসা শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে ভালো আচরণের ধারনা সৃষ্টি হবে। যেমন ধরুন আপনি খাবার বেড়ে ছেলে কে ডাক দিলেন খেয়ে যেতে। সে যখন আপনার ডাক শুনে চলে এল আপনি একটু তার দিকে তাকিয়ে খুশির হাসি হাসবেন। এই খুশির হাসি এখানে প্রশংসা। এছাড়াও উৎসাহ প্রদান পুরষ্কার প্রদান এগুলো শিশুদের ভালো আচরণ করতে সাহায্য করে।
অবশ্যই ডেইলি রুটিন ব্যবহার করবেন- ডেইলি রুটিন ব্যবহার এর ফলে শিশুর মধ্যে ধারনা সৃষ্টি হবে কখন কোন কাজটা কতক্ষণ ধরে করতে হবে। ঘরের রুটিনের সাথে বাইরে যখন বের হবেন সেই সময় আপনার চাইল্ড আর কাজ কি হবে সেটাও রুটিনের মধ্যে রাখুন। যেমন ট্যাক্সিতে চড়ে থেরাপি সেন্টারে যেতে হবে। ট্যাক্সি তে থাকাকালীন সময়ে শিশু কে গান শুনতে দিন কিনবা দুজনে মিলে বাইরের দৃশ্য দেখুন।
সামাজিক অভিযোজন ADHD শিশুদের আচরণ সংশোধনে সাহায্য করে। তাই আচরণ পরিকল্পনায় সামাজিক বিষয়গুলো অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করবেন। যেমন-
- কারো সাথে শিশু নিজের খেলনা শেয়ার করল বা ঘরে আসা অতিথির সাথে হ্যান্ডশেক করল- এরুপ ভালো আচরণের জন্য শিশুকে সেই সময়ই পুরষ্কার দিন।
- শিশুকে শেখাতে হবে যদি অন্য কোনো শিশুর সাথে তার সমস্যা হয় তখন সে কি করবে- এক্ষেত্রে সে বড়দের বা টিচার কে জানাবে।
- শিশুকে শেখাতে হবে কি বললে বা করলে সে বুঝবে এখন তাকে থামতে হবে বা কাজটা করতে হবে। এর জন্য ছোটো প্রম্পট ব্যবহার করুন। যেমন থামো, কর, ভাবো।
- আপনার শিশু যাতে বিভিন্ন সোশ্যাল স্কিল গুলো অভ্যাস করতে পারে এর জন্য হঠাৎ কিছু আয়োজন করুন বা কোথাও নিয়ে যান।
ADHD শিশুদের মধ্যে দেখা যায় তারা সারাদিন ছোটাছুটি করছে অথচ হাপিয়ে যাচ্ছে না। প্রতি মুহূর্তে যেন নতুন করে এনার্জি সঞ্চয় করে লাফাতে শুরু করে। এর জন্য শিশুর সারাদিনের কাজের মধ্যে অনেকটা শারীরিক এক্সারসাইজ রাখুন। ঘরের বিভিন্ন কাজে তাকে যুক্ত করুন। বয়স অনুযায়ী হেভি ওয়ার্ক করাতে পারেন। যেমন ধরুন বালতি তে জল ভরে সেটা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরাতে বলুন। টবে জল দিতে বলুন।
ADHD -শিশুদের অনেকের ঘুমের সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। তাই পর্যাপ্ত ঘুম যাতে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে সমস্ত টিভি মোবাইল বন্ধ রাখুন। সারাদিনের কাজের মধ্যে সময়ের ভারসাম্য বজায় রেখে টিভি, মোবাইল এসব ব্যবহার করতে দিন। তবে এমন যেন না হয় সারদিনের অন্যান্য কাজের সময়ের চেয়ে শিশু টিভি ও মোবাইল নিয়ে বেশি সময় ব্যস্ত থাকছে।
পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াবেন এতে শিশুর এনার্জি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
স্কুলে পড়াশুনা করছে যে সমস্ত ADHD শিশুরা তাদের স্কুলেও টিচার দের অবশ্যই আচরণ পরিকল্পনায় কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন-
টাস্ক গুলো কে ছোটো ছোটো করে ভাগ করে দিতে হবে।
যদি সম্ভব হয় প্রতি adhd শিশুর জন্য একজন করে টিচার এর ব্যবস্থা করতে হবে।
শিশুকে ক্লাসরুমের মাঝে বসার ব্যবস্থা করে দিন এতে তার চারপাশে খুব একটা নড়াচড়া করার বা বাইরে দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ থাকবে না।
ADHD শিশুদের জন্য অতিরিক্ত সময়ের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সে নিজের কাজটা সম্পূর্ণ করতে পারে।
কঠিন টাস্কগুলো সকালের দিকে কিনবা টিফিনের পর দিন।
ADHD মাত্রা যদি খুব বেশি পরিমাণে থাকে তবে কিছু ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে স্টিমুলেট মেডিকেশন অনেক সময় ডক্টররা প্রেসক্রাইব করে থাকেন। ক্ষণস্থায়ী মনোযোগ, আবেগপ্রবণ আচরণ, অতিরিক্ত চঞ্চলতার জন্য এই মেডিকেশন ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়। কিছু ওষুধ আছে যা আপনার চাইল্ড এর পেডিয়াট্রিশিয়ান বা সাইক্রাটিস্ট ভালো বলতে পারবেন কোনটা আপনার শিশুর জন্য উপযুক্ত। তবে স্টিমুলেট মেডিকেশন শুরুর আগে আপনার ডক্টর এর কাছে অবশ্যই নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নিবেন-
- প্রতিটা ডস কত বার খাওয়াতে হবে?
- এই মেডিকেশনের সাইড এফেক্ট কি?
- কতদিন আপনার শিশুকে এই ওষুধ খেয়ে যেতে হবে?
এছাড়াও অন্যান্য কিছু ওষুধ রয়েছে যা শিশুর মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে। তবে ADHD মেডিকেশন ব্যবস্থার কিছু সাইড এফেক্ট আছে তার জন্য নিয়মিত ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে।
যদি আপনার পরিবারে একটি ADHD চাইল্ড থাকে তবে অবশ্যই উক্ত পরিকল্পনা করে আপনাদের চলতে হবে। এর সাথে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও এই সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে ও বিশেষ কয়েকজন কে তৈরি রাখুন যাতে আপনি ব্যস্ত থাকলে তারা আপনার শিশুকে সামলে রাখতে পারেন।
ধন্যবাদ
সন্দীপ গুন
প্রিন্সিপল
দিশা ডিজিট্যাল স্কুল