অ্যাফাসিয়া কি?
অ্যাফাসিয়া হচ্ছে একটি ভাষাগত সমস্যা যাতে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যাক্তির ভাষা বোঝা ও সঠিক ভাবে ব্যবহারের দক্ষতা নষ্ট হয়ে যায়।বিজ্ঞানীদের মতে, মস্তিস্কেরদুটি অংশ রয়েছে যেগুলো আমাদের কথা ও ভাষা নিয়ন্ত্রন করে, সে গুলো হল ব্রোকাস এরিয়া ও ভার্নিকিস এরিয়া। মস্তিস্কের এই দুটি অংশে কোন ধরনের ক্ষতি হলে অ্যাফাসিয়া হয়ে থাকে। স্ট্রোকের কারনে মানুষকে অ্যাফাসিয়ায় বেশি আক্রান্ত হতে দেখা গেলেও ব্রেন ইনজুরি, মৃগী রোগ, ব্রেন টিউমার, পারকিন্সন্স ডিজিজ ইত্যাদি কারনেও অ্যাফাসিয়া হতে পারে।
অ্যাফাসিয়ার প্রকারভেদ
অ্যাফাসিয়ার কয়েকটি প্রকারভেদ থাকলেও প্রধানত তিন ধরনের অ্যাফাসিয়া সচরাচর দেখা যায়- ব্রোকাস অ্যাফাসিয়া, ভার্নিকিস অ্যাফাসিয়া ও গ্লোবাল অ্যাফাসিয়া।
ব্রোকাস অ্যাফাসিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তির বৈশিষ্ট্য গুলো হল-
- অনর্গল কথা বলার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ও কথা বলতে কষ্ট হওয়া।
- ছোট ছোট বাক্যে অস্বাভাবিক ভাবেথেমে থেমে কথা বলা ও বাক্যের গঠন ঠিক না থাকা।
- কথা বলার গতি অত্যন্ত ধীর হয়ে যাওয়া।
- কথা বলার সময় অনেক বেশি অ্যা, আহ, উম ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা।
- কথা বলতে পারার তুলনায় বুঝতে পারার ক্ষমতা ভাল থাকা।
- পড়তে ও লিখতে সমস্যা।
- কথা বলার সময় অনেক শব্দ বাদ দিয়ে কথা বলা, বিশেষ করে বিশেষ্য ও ক্রিয়া বাচক শব্দ।
- শব্দ মনে করে বলতে সমস্যা ও কখনো কখনো ভুল বা অর্থহীন শব্দ বলা।
ভার্নিকিস অ্যাফাসিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তির বৈশিষ্ট্যগুলো হল-
- অস্বাভাবিক ভাবে অনর্গল কথা বলা,উচ্চারন সঠিক থাকলেওবাক্যের কোন অর্থ না থাকা।
- কথা বুঝতে পারার তুলনায় বলতে পারার ক্ষমতা ভাল থাকা।
- কথার পুনরাবৃত্তি করতে না পারা।
- বড় বাক্যে অত্যন্ত দ্রুত কথা বলা, বাক্যের গঠন ঠিক থাকে।
- কোন লেখা পড়ে তা বুঝতে না পারা।
- নতুন শব্দ তৈরি করে বলা, যার কোন অর্থ নেই।
- এতে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা এতই বেশি কথা বলতে পারে যে কখনো কখনো তাদেরকে জোরপূর্বক কথা বলা থেকে বিরত রাখতে হয়।
গ্লোবাল অ্যাফাসিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তির বৈশিষ্ট্য গুলো হল-
- সকল ধরনের ভাষাগত দক্ষতা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আক্রান্ত ব্যাক্তির বেশীরভাগ সময়েই অন্যদের কথা শুনে বা কোন লেখা পড়ে বুঝতে পারে না, সঠিক ভাবে বলতে বা লিখতেও পারে না।
- কথা বলার গতি অত্যন্ত ধীর হয়ে যাওয়া ও কথা বলার সময় আটকে আটকে যাওয়া।
- আক্রান্ত ব্যাক্তি খুব অল্প সংখ্যক শব্দ ব্যবহার করতে পারে, শব্দ মনে করে বলতে সমস্যা হয়, অন্য কোন ব্যাক্তি কোন একটি শব্দ বললে তা পুনরাবৃত্তি করতে পারে না ।
- আক্রান্ত ব্যাক্তি একই শব্দ বা বাক্যাংশ বার বার বলতে থাকে।
তবে প্রকারভেদ যাই হোক, সকল ধরনের অ্যাফাসিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তিরা অন্যের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরন করতে পারেনা ও নিজের প্রয়োজন বোঝাতে পারেনা বলে তারা অল্পতেই রেগে যায় ও হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়ে।
অ্যাফাসিয়া নির্ণয় ও চিকিৎসায় স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি
অ্যাফাসিয়ার একমাত্র চিকিৎসা হল স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি। যেসব ব্যাক্তিদের যোগাযোগে সমস্যা হয়, তাদের সাহায্যের জন্য স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি হল একটি বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ব্যাবস্থা। একজন স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট অ্যাফাসিয়া নির্ণয় ও তার চিকিৎসা করেন। স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি নেয়ার ফলে অ্যাফাসিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তি যে সম্পুর্ন ভাবে তার আগের যোগাযোগের সক্ষমতা ফিরে পাবেন তা নয়, কিন্তু থেরাপি গ্রহনেরফলে অ্যাফাসিয়া আক্রান্ত ব্যাক্তির যোগাযোগের উন্নতি হবে- এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। এমনকি গ্লোবাল অ্যাফাসিয়ার ক্ষেত্রেও স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি গুরুত্বপূর্ণভুমিকা পালন করতে পারে। একজন অ্যাফাসিয়া আক্রান্ত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট যেসব বিষয়গুলোর দিকে জোর দেন সেগুলো হল-
- অ্যাফাসিয়ার পর যতটুকু যোগাযোগের সক্ষমতা রয়েছে তার পরিপূর্ণ ব্যবহার।
- নতুন করে শেখার মাধ্যমে ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি।
- মৌখিক যোগাযোগের সাথে সাথে সাহায্যকারী হিসেবে বিকল্প যোগাযোগ ব্যাবস্থার সাথে আক্রান্ত ব্যাক্তি ও তার পরিবারকে পরিচিত করে দেয়া।
এছাড়াও স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ আক্রান্ত ব্যাক্তির অবস্থা ও শেখার ধরনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের থেরাপির কৌশল ব্যাবহার করেন, যেমন- Melodic Intonation Therapy (MIT), Group therapy, Visual action Therapy (VAT) ইত্যাদি। স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট প্রয়োজনে রোগীর পরিবারের সদস্যদের নিয়েও কাজ করেন ও তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন। রোগীর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্টদের সাথেও কাজ করেন।
কোথায় পাওয়া যাবে স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি?
বাংলাদেশে স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি একটি নতুন চিকিৎসা সেবা হলেও অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এই সেবা মানুষের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এই সেবা পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)- তে সর্বপ্রথম চালু হলেও ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাও এই সেবা প্রদানে এগিয়ে এসেছে। ফেইথ বাংলাদেশ তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে অভিজ্ঞ স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টগন অ্যাফাসিয়া সহ যোগাযোগের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রথম বারের মত থেরাপি চিকিৎসায় অনলাইন বুকিং সেবার মাধ্যমে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। বুকিং নেয়া অথবা বিস্তারিত জানার জন্য যোগাযোগ করুন-
ফেইথ বাংলাদেশ
৯/১ (৫ম তলা), ব্লক-এ, স্যার সৈয়দ রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
হটলাইনঃ =+৮৮০১৭৮৩২৪৮৪২৩
ওয়েবসাইটঃ www.faithbangladesh.org/services
সম্পাদনাঃ নবাগত দাস
মুল লেখাঃ নবাগত দাস, সাদ মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান, রাজু আহমেদ
স্পীচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট
লেখক কে অনেক ধন্যবাদ, অ্যাফাসিয়া চিকিৎসা বিষয়ে খুব গুরুত্বপূর্ন ও প্রয়োজনীয় ও সচেতনামূলক একটি সুন্দর লেখার জন্য…………।