আনন্দ দেবে ইনডোর গেম ও শিশু-কিশোর সাহিত্যের বই
নওশাদ জামিল
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের কারণে চলাফেরায়ও আছে কড়াকড়ি। ফলে এক ধরনের ঘরবন্দি দেশের প্রায় চার কোটি শিশু-কিশোর। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একাডেমিক পড়াশোনায় মন বসছে না তাদের। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খেলাধুলা, ঘোরাঘুরির আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত। হঠাত্ ছন্দপতনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাদের জীবনে। এ অবস্থায় শিশু-কিশোরদের আনন্দময় পরিবেশ দিতে অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও মনোবিদরা। ঘরবন্দি শিশু-কিশোরদের আনন্দ দিতে সাহিত্যের মজার বই ও ইনডোর গেম খেলার সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, মানস-বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় শৈশব-কৈশোর। এ সময়টিই সব কিছু নতুন আলোক নিয়ে উপস্থিত হয়। তাই এ পর্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় বেশির ভাগ শিশু-কিশোর খুব যান্ত্রিক হয়ে উঠছে, হাঁপিয়ে উঠছে ঘরবন্দি থাকতে থাকতে। তাদের জগত্ হয়ে যাচ্ছে বর্ণহীন। তাদের জগত্টা উজ্জ্বল করতে শিশু-কিশোর সাহিত্য হতে পারে সহায়ক। সততা, নৈতিকতা আর আপসহীনতার বীজ শিশু-কিশোর মনে বপন করতে হয়, বস্তুত এ কাজটি করতে পারে পাঠাভ্যাস। পাশাপাশি ইনডোর গেম তাদের জগত্ আনন্দময় করতে পারে।
চার দেয়ালে বন্দি থেকে শিশু-কিশোররা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন রাজধানীর কেএম দাস লেনের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন। তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে মারিয়াম মনোয়ার মৃত্তিকা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে মেহজাবিন মনোয়ার অবন্তী একবারেই ছোট। বড়জন ঘরে বসে আসলে বিরক্তই হয়ে গেছে। সারা দিন টিভি দেখে, কখনো মোবাইলে গেমস খেলে, আবার কখনো রংতুলি নিয়ে বসে।’ মনোয়ার হোসেন জানান, তাঁর বড় মেয়ের হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন বেশ কিছু শিশু সাহিত্যের বই। বইগুলো পড়ে ভালো সময় কাটছে ওর।
![](http://blog.faithbangladesh.org/wp-content/uploads/2020/05/maxresdefault-1024x576.jpg)
মারিয়াম মনোয়ার মৃত্তিকা বলে, ‘ঘরে বসে থাকতে কতক্ষণ ভালো লাগে? প্রায় এক মাস স্কুল বন্ধ। কোচিংও বন্ধ। সিলেবাসের পড়াশোনাও শেষ। আব্বু কিছু গল্পের বই পড়তে দিয়েছে। বইগুলো পড়ে ভালো সময় কাটছে আমার।’
শিশু-কিশোরদের নিয়ে খুব চিন্তিত মগবাজারের বাসিন্দা কায়সার হোসেন। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘আমার বড় মেয়ের নাম আনন্দিতা হোসেন। হলিক্রস কলেজ থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে। ফলের অপেক্ষায় থাকা আনন্দিতার মনে আনন্দ নেই। কবে ফল প্রকাশ হবে, সেই চিন্তার পাশাপাশি সামনের দিনগুলো কেমন হবে, সেটি নিয়েও টেনশন রয়েছে তার।’ আনন্দিতা হোসেন বলল, ‘সারা দিন ঘরে থাকতে থাকতে বিমর্ষ হয়ে গেছি। বাসায় টিভি দেখি। গান শুনি। এ ছাড়াও কিশোর সাহিত্যের বই পড়ি। যখন বই পড়ি, তখন কিছুটা ভালো অনুভব করি।’
বাংলা সাহিত্যের বেশির ভাগ লেখক কলম ধরেছেন শিশু-কিশোরদের জন্য। তাদের জন্য লিখেছেন নানা স্বাদের গল্প-উপন্যাস, কবিতা-ছড়াসহ নানা রচনা। অত্যন্ত সমৃদ্ধ আমাদের শিশু ও কিশোর সাহিত্য। অনেক বাড়িতে রয়েছে শিশু-কিশোর সাহিত্যের বই। ঘরবন্দি শিশু-কিশোরদের এখন অফুরন্ত অবসর। পাঠ্যবই পড়ার ফাঁকে অনেকেই শিশু-কিশোর সাহিত্যের বই পড়তে পারে। এ জন্য অভিভাবকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের হাতে তুলে দিতে হবে মজার মজার বই।
অনেক বাসা-বাড়িতে থাকে ইনডোর গেমের নানা উপকরণ। স্কুল বন্ধ থাকায় মা-বাবার সঙ্গে শিশু-কিশোররা মেতে উঠতে পারে ইনডোর গেমসেও। ইনডোর গেম যেমন—দাবা, লুডু, মনোপলি, পাজল গেম, ওয়ার্ড বিল্ডিং, লেগো সেট ও বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেম।
শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার প্রভাবে সামাজিক বিপত্তি ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে গোটা সমাজেই। সমাজের সব শ্রেণিতেই পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। শিশু-কিশোররাও তার ব্যতিক্রম নয়। ঘরে থাকতে থাকতে তাদের অনেকেই বিরক্তি ও বিমর্ষ হয়ে উঠছে। এ জন্য তাদের আনন্দময় পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাতে পারেন অভিভাবকরা। এ সময় তাদের সঙ্গে আড্ডা, গল্প-গুজব ও নানা ইনডোর গেম খেলতে পারেন। পাশাপাশি শিশু-কিশোর সাহিত্যের বই পাঠে তাদের উৎসাহ দিতে পারেন। তাতে সুন্দর সময় কাটবে শিশু-কিশোরদের।’
![](http://blog.faithbangladesh.org/wp-content/uploads/2020/05/392cd86ace525de888a13f62644ba82e.png)
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘শিশু-কিশোররা আমাদের অমূল্য সম্পদ। হঠাত্ করে তাদের জীবনে একটা ছন্দপতন হয়েছে। এ সময় তাদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। দিতে হবে আনন্দময় পরিবেশ। অনেক বাসা-বাড়িতে শিশু-কিশোর সাহিত্যের নানা বই রয়েছে। শিশু-কিশোর উপযোগী বইগুলো তাদের পড়তে উৎসাহ দেওয়া উচিত অভিভাবকদের।’
করোনার সংকটকালে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো যেন ইতিবাচক হয়, অভিভাবকদের সেদিকে লক্ষ রাখতে বলেন মনোবিদ মোহিত কামাল। তিনি বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের সঙ্গে যত বেশি কোয়ালিটি টাইম কাটাবেন, কথা বলবেন, তত বেশি তাদের উদ্বেগ কমবে। পাশাপাশি তাদের জন্য ইনডোর গেমের ব্যবস্থা করতে হবে। তুলে দিতে হবে শিশু-কিশোর সাহিত্যের নানা মজার বই।’